দ্রোহ

 ১


শ্রাবণ মাসের প্রারম্ভ। 

পা ডোবা জলে দ্রুতগামী হাওয়াই চপ্পল, সাদা পাঞ্জাবি, ফাঁকা পেয়ালা- ঘন কালো মেঘাছন্ন আকাশের তলায়, লাল ঝান্ডায় ঢাকা হতভাগা শহর আজ অস্থির। 


"এত চাওয়া নিয়ে কোথা যাই!"

রেকর্ড প্লেয়ারটার অনবরত গুঁজনধ্বনি, এবং একটানা বিভৎস বৃষ্টির আওয়াজের মধ্যেই যেন এক অসম্ভব নিস্তব্ধতা। বৃষ্টির দিন গুলো বড্ড মন কেমনের। ক্যাম্পাস বন্ধ, ইউনিয়ন মিটিং আজ নেই। এক গুচ্ছ বই, প্যাম্ফ্লেট, ঘরের এক কোনায় অবর্জনাতুল্য আসবাবপত্র, এবং ওই রেকর্ড প্লেয়ারের মাঝে সকাল থেকে অচল হয়ে বসে থেকে বিষন্নতা পেয়ে বসেছে। 


আজ অনিমেষ কলকাতা যাবে। 

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে আজ দিনভর চলবে প্রবল বৃষ্টি। ট্রেন সম্ভত লেট করবে। মা কাল রাত থেকেই আপত্তি জানাচ্ছেন। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, নাকি জঙ্গল সাঁওতালদের ভয়, সেটা উনি অবশ্য নির্দিষ্ট করেননি। 

স্টেশনের পথটা বেশ নির্জন। নিস্তব্ধ। সকালের দিকে একপশলা বৃষ্টির পরে রাস্তা গুলো বেশ কাদাটে। হেঁটে যাওয়া আদতেই ঝামেলাপূর্ণ। 

ছেলেটাকে আজকের দিনেই যেতে হলো! সৈন্যবাহিনীর আগমনের খবর শোনেনি? আজ তারা খোঁজে বেরিয়েছে। জঙ্গলমহলে অক্ষম পথিক কি তাদের কাছে কম সন্দেহজনক? তারা পার্থক্য বুঝবে?

মায়ের অন্তদৃষ্টি কি আর ভুল হয়! 





মধ্যবিত্ত পরিবারের এক স্নাতকের ছাত্র। গান, নাটক, সাহিত্যে মেতে বেশ দিন চলে। রহস্য উপন্যাসের খন্ড শোভিত করেছে ঘরের বুক শেল্ফ। 

কে একবার কৌতূহল সহিত জিজ্ঞেস করেছিলেন- "বারান্দা থেকে না নামা পাবলিক, এই কথাটির অর্থ কী?"

৭০- এর শহর। পোস্টার, স্টেনসিল, ঝান্ডা, গুলি, রক্তপাত। বাংলা জুড়ে সুচতুর জননেতার আবেগপূর্ণ কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে আবেগান্বিত বক্তৃতা। কলকাতা শহরের অলিগলি তে ভিড় করেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া জুটমিলের শ্রমিকেরা। আগুনের নিশ্বাস ছাড়তে শুরু করেছে শহর। 

তার মধ্যে বারান্দা থেকে না নামা জনগন কারা?

"সবকিছুই রাজনীতির নোংরা খেলা"। 

শব্দহীনতাটাই গম গম করছে। 

যেন গত শতাব্দীর অনেক উচ্চারিত শব্দ এখানে জমে নিস্তব্ধ হয়ে আছে।








Comments

Popular posts from this blog

Clockwork Orange

Language as a Witness

What is The Lazy Eye?